পাল ও সেন শাসনামল

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী | - | NCTB BOOK
1.7k
1.7k
common.please_contribute_to_add_content_into পাল ও সেন শাসনামল.
common.content

পাল শাসনামল

1k
1k

পাল সাম্রাজ্যের উৎসস্থল ছিল বাংলা অঞ্চল। পাল সম্রাটদের নামের শেষে 'পাল' অনুসর্গটি যুক্ত ছিল যার অর্থ "রক্ষাকর্তা"। পাল সম্রাটেরা বৌদ্ধধর্মের মহাযান ও তান্ত্রিক সম্প্রদায়ের অনুগামী ছিলেন। শশাঙ্কের মৃত্যুর পর দীর্ঘদিন বাংলায় তেমন কোন যোগ্য শাসক ছিল না ৭৫০ খ্রিষ্টাব্দে গৌড়ের সম্রাটপদে গোপালের নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে এই সাম্রাজ্যের পত্তন ঘটে। অধুনা বাংলা ও বিহার ভূখণ্ড ছিল পাল সাম্রাজ্যের প্রধান কেন্দ্র। এই সাম্রাজ্যের প্রধান শহরগুলি ছিল পাটলীপুত্র, বিক্রমপুর, রামাবতী (নরেন্দ্র), মুঙ্গের, তাম্রলিপ্ত ও জগদ্দল। বাংলার প্রথম বংশানুক্রমিক শাসন শুরু হয় পাল রাজত্বকালে। সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ৪০০ বছর শাসন করেন পাল বংশের রাজারা।

জেনে নিই

  • বাংলার প্রথম বংশানুক্রমিক শাসন শুরু হয় পাল বংশের মাধ্যমে।
  • বাংলার দীর্ঘস্থায়ী (৪০০ বছর) রাজ্য শাসন করে পাল রাজবংশ।
  • পাল বংশের রাজারা ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী।
  • মোট ১৭ জন পাল শাসক বাংলা শাসন কার্য পরিচালনা করেন।
  • পাল রাজাদের পিতৃভূমি ছিল- বরেন্দ্র অঞ্চল।
  • বাংলায় চিত্রশিল্প ও পালি ভাষার বিস্তার ঘটে পাল আমলে।
  • এ সময়ে বাংলা সাহিত্যের একমাত্র প্রাচীন নিদর্শন চর্যাপদ রচিত হয়।
  • চর্যাপদ নেপালের রাজদরবার থেকে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আবিষ্কার করেন- ১৯০৭ সালে।
  • পাল যুগে ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের প্রথম আবির্ভাব হয়।
common.content_added_by

গোপাল (৭৫০-৭৮১)

894
894

গোপাল পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা। গোপাল ছিলেন গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত। ৭৫০ থেকে ৭৮১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দেশ শাসন করেন। ভারতের বিহারে 'অদন্তপুরী মহাবিহার' প্রতিষ্ঠা করেন।

common.content_added_by

ধর্মপাল (৭৮১-৮২১)

799
799

পাল রাজাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন ধর্মপাল। বাংলা ও বিহারব্যাপী তাঁর শাসন প্রতিষ্ঠিত ছিল। তিনি পরমেশ্বর, পরমতারক মহারাজাধিরাজ উপাধি লাভ করেন। বিক্রমশীল উপাধি অনুসারে 'বিক্রমশীল বিহার' প্রতিষ্ঠা করেন। নওগাঁ জেলার পাহাড়পুরে ‘সোমপুর বিহার’ প্রতিষ্ঠা করেন। ধর্মপাল নেপাল পর্যন্ত রাজ্য বিস্তার করেন। 'সোমপুর বিহার' জাতিসংঘের ইউনেস্কো কর্তৃক ১৯৮৫ সালে বিশ্বসভ্যতার নিদর্শন হিসেবে (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ) স্বীকৃত হয়েছে।

common.content_added_and_updated_by

দেবপাল (৮২১-৮৬১)

879
879

দেবপাল ছিলেন রাজা ধর্মপালের পুত্র এবং পাল বংশের তৃতীয় রাজা। তিনি মুঙ্গেরে (বিহার) রাজধানী স্থাপন করেন।তিনি পাল সাম্রাজ্যের সবচেয়ে বেশি সাম্রাজ্য বিস্তারকারী শাসক। দেবপালের পৃষ্ঠপোষকতায় নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় বৌদ্ধ সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠে। দেবপাল আসামকে করদ রাজ্যে পরিনত করেন।

common.content_added_by

নারায়ণপাল

816
816

নারায়ণপাল ছিলেন পাল বংশের পঞ্চম রাজা। তিনি সবচেয়ে বেশি (৫৪ বছর) ক্ষমতায় থাকেন।

common.content_added_by

প্রথম মহীপাল (৯৯৫-১০৪৩)

807
807

মহীপালের রাজত্বকাল ছিল ৫০ বছর। তিনি দিনাজপুরের মহীপাল দীঘি ও মুর্শিদাবাদের মহীপালের সাগরদীঘি নির্মাণ করে। তাঁর উপাধি ছিল 'পরমেশ্বর পরম ভট্টারক মহারাজাধিরাজ'। মহীপালের নামানুসারে বগুড়ার মহীপুর, রংপুরের মাহিগঞ্জ, দিনাজপুরের মাহীসন্তোষ ইত্যাদি অঞ্চলের নামকরণ করা হয়।

common.content_added_by

দ্বিতীয় মহীপাল

991
991

বরেন্দ্র অঞ্চলের সামন্তবর্ণ দ্বিতীয় মহীপালের সময়ে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। কৈবর্ত বিদ্রোহকে বরেন্দ্র বিদ্রোহ বা সামস্ত বিদ্রোহও বলা হয়। জেলে সম্প্রদায়কে কৈবর্ত বলা হলেও এটি মূলত জেলে, কৃষক, শ্রমজীবীসহ বিভিন্ন নিচু শ্রেণীর কর্মজীবী মানুষকে নির্দেশ করে। কৈবর্ত বিদ্রোহের নেতা ছিলেন কৈবর্ত নায়ক দিব্যোক বা দিব্য। তিনি দ্বিতীয় মহীপালকে হত্যা করে বরেন্দ্র দখল করে শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।

common.content_added_by

রামপাল(১০৮২-১১২৪)

747
747

পাল বংশের সর্বশেষ সফল শাসক ছিলেন রামপাল। শাসক রামপাল দিব্যকে পরাজিত করে বরেন্দ্র পুনরুদ্ধার করেন। তিনি রাজধানী স্থাপন করেন 'রামাবতী' (মালদহে)। দিনাজপুর শহরের নিকট যে রামসাগর রয়েছে তা রামপালের কীর্তি। তাঁর সভাকবি ছিলেন’ রামচরিত' এর রচয়িতা কবি সন্ধ্যাকর নন্দী।

common.content_added_by

মদনপাল (১১৪৩-১১৬১)

844
844

মদনপালের পৃষ্ঠপোষকতায় সন্ধ্যাকর নন্দী রামচরিত রচনা করেন। তিনি বিজয় সেনের কাছে পরাজয়ের মধ্যদিয়ে সেনরা বাংলাকে দখল করেন।

common.content_added_and_updated_by

সেন শাসনামল

2k
2k

সেন রাজবংশ ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম দিকের মধ্যযুগীয় একটি হিন্দু রাজবংশ ছিল, সেন বংশের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় একাদশ শতাব্দীর মাঝপর্বে। সেনরাজাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে তারা পালদের হটিয়ে রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং সামাজিক শাসন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন সুদূর কনৌজ পর্যন্ত। কর্ণটি থেকে বৃদ্ধ বয়সে বাংলার আসেন সামন্ত সেন। তিনি প্রথমে বসতি স্থাপন করেন রাঢ় অঞ্চলে বা গঙ্গা নদীর তীরে। তিনি রাজ্য প্রতিষ্ঠা না করায় সেন বংশের প্রতিষ্ঠাতার মর্যাদা দেওয়া হয় হেমন্ত সেনকে। আর বিজয় সেনকে বলা হয় সেন বংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা। সেনরা জাতিতে ব্রাহ্মণ ছিলেন।

জেনে নিই

  • সেন বংশের প্রথম পুরুষ ছিলেন সামন্ত সেন।
  • সেন বংশের প্রতিষ্ঠাতা হেমন্ত সেন।
  • সেন বংশের রাজাদের আদিনিবাস দক্ষিণাত্যের কর্ণাটক।
  • বর্ণপ্রথার প্রচলন করেছিলেন সেন রাজারা।
  • সেন রাজারা ব্রাহ্মণ ধর্মের প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করে। ধারণা করা হয়, হেমন্ত সেন পাল রাজাদের অধীনে একজন সামন্ত রাজা ছিলেন।
  • কৈবর্ত বিদ্রোহের সময় পাল বংশের রাজা রামপালকে সাহায্য করেন হেমন্ত সেন।
common.content_added_by

বিজয় সেন (১০৯৮-১১৬০)

996
996

হেমন্ত সেনের মৃত্যুর পর বাংলার সিংহাসনে আরোহণ করেন বিজয় সেন। সেন বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজা বিজয় সেন। মহারাজাধিরাজ, পরমেশ্বর পরমভট্টারক উপাধি গ্রহণ করেন। পাল বংশের পতন ঘটে বিজয় সেনের হাতে। হুগলী জেলার বিজয়পুর ছিল বিজয় সেনের প্রথম রাজধানী। দ্বিতীয় রাজধানী স্থাপন করেন বর্তমান মুন্সীগঞ্জ জেলার বিক্রমপুরে। ধর্মের দিক থেকে বিজয় সেন ছিলেন শৈব।

common.content_added_by

বল্লাল সেন (১১৬০-১১৭৮)

888
888

বিজয় সেনের পর সিংহাসনে আরোহণ করেন তাঁর পুত্র বল্লাল সেন । 'দানসাগর' ও 'অদ্ভূতসাগর' গ্রন্থের লেখক বল্লাল সেন। ; অদ্ভুতসাগর' গ্রন্থটি তিনি সমাপ্ত করে যেতে পারেননি। এটি সমাপ্ত করে তাঁর পুত্র লক্ষ্মণ সেন। বল্লাল সেন ছিলেন তন্ত্র হিন্দুধর্মের পৃষ্ঠপোষক। বল্লাল সেনের আমলে বৌদ্ধ ধর্ম দুর্বল হয়ে পড়ে। বল্লাল সেন হিন্দু সমাজকে নতুন করে গঠন করার জন্য 'কৌলিন্য প্রথা প্রবর্তন করেন। বল্লাল সেন শেষ জীবন অতিবাহিত করেন বানপ্রস্থ অবলম্বন করেন। বল্লাল সেনের বিশেষ উপাধি ছিল- অরিরাজ নিঃশঙ্ক শঙ্কর।

common.content_added_by

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

লক্ষণ সেন (১১৭৮-১২০৬)

862
862

গৌরেশ্বর লক্ষ্মণ সেন ছিলেন সর্বশেষ কার্যকরী রাজা। বৃদ্ধ বয়সে লক্ষ্মণ সেন গঙ্গা তীরে দ্বিতীয় রাজধানী নবদ্বীপে বসবাস শুরু করেন। ১১৯৬ খ্রিস্টাব্দে সুন্দরবন এলাকায় ডোম্মন পাল বিদ্রোহী হয়ে একটি স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। লক্ষ্মণ সেনের প্রধানমন্ত্রী ও ধর্মীয় প্রধান ছিলেন হলায়ুধ মিশ্র। হলায়ুধ মিশ্র বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগের সৃষ্টিকর্ম 'সেক শুভোদয়া' রচনা করেন। লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি ছিলেন- জয়দেব। তার রচনা গীতগোবিন্দ। ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খলজি রাজধানী নদীয়া আক্রমণ করে। লক্ষ্মণ সেন নদীপথে পালিয়ে পূর্ববঙ্গের রাজধানী বর্তমান মুন্সীগঞ্জ জেলার বিক্রমপুরে আশ্রয় গ্রহণ করেন। ১২৩০ সাল পর্যন্ত লক্ষ্মণ সেনের দুই পুত্র কেশব সেন ও বিশ্বরূপ সেন নামমাত্র শাসন করে।

common.content_added_and_updated_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion